সংবিধান অনুযায়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের মসনদে আরোহণ ফাঁসিযোগ্য অপরাধ এবং প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভা এবং সংসদ যে আইনত এখনো বলবৎ আমাদের এ পোস্টের বিপরীতে এখন পর্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কোনো পাল্টা বক্তব্য কেউ দেয় নি। তবে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে, এটা যেহেতু অভ্যুত্থান, সেহেতু সংবিধান রক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই সংবিধানে না থাকলেও যে কেউ ক্ষমতায় বসে যেতে পারে। যারা এটা বলছে, তারা সাময়িক উত্তেজনায় রাষ্ট্রের সংজ্ঞা না বুঝেই বলছে। রাষ্ট্র থাকলে সংবিধানও থাকবে। অভ্যুত্থান মানে সংবিধান বাতিল হয়ে যাওয়া নয়। তবে এই সত্য তাত্ত্বিকভাবে বুঝানোর চেয়ে আমরা দেখি ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার শপথ গ্রহণের সময় কি প্রতিজ্ঞা করেছেন:
"আমি মুহাম্মদ ইউনূস সশ্রদ্ধচিত্তে (প্রায় ১০ সেকেন্ড ব্ল্যাকআউট) শপথ গ্রহণ করিতেছি যে, আমি আইন অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিবো। আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিবো। আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিবো। এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিবো।"
শপথ অনুযায়ী, ড. ইউনূস সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তার জন্য দায়বদ্ধ। শপথে বলা হয় নি যে, আমি সংবিধান বাতিল করলাম বা নতুন কোনো সংবিধান লিখবো।
প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিই সর্বেসর্বা এরকম একটি ভাইব তৈরির চেষ্টা চলছে। আদতে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খুবই সীমিত। নিয়োগের বিষয়ে পরে যাই। আগে দেখি রাষ্ট্রপতি চাইলেই কি সাংসদদের চাকরি নট করে সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারেন কি না। পত্রিকায় দেখলাম, "রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন।" - এটা পুরোপুরি ভুল রেফারেন্স। ওই অনুচ্ছেদে আছে, "(৩) এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন"। রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই একা একা সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও নতুন নির্বাচন করে সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীসহ সব মন্ত্রীই দায়িত্ব পালন করবেন।
এখন আসি রাষ্ট্রপতি কোন ক্ষমতাবলে "অন্তর্বর্তী সরকার" এর প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারেন। প্রথমত বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে, আমাদের জানামতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই বিলোপ করা হয়েছে। এবং চাইলাম আর করলাম বলে "অন্তর্বর্তীকালীন সরকার" নামের কিছু বসিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে এরকম কোনোকিছু নেই। উইকি বলছে, "এই ব্যবস্থা ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক এবং সেনাবাহিনী প্রধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।" অর্থাৎ এই ব্যবস্থা পুরোপুরি সংবিধান-বহির্ভূত একটি ব্যবস্থা।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রীকে এবং প্রধান বিচারপতিকে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তার ইচ্ছাই শেষ কথা নয়। যেমন, প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে, অনুচ্ছেদ ৫৬ অনুসারে, "(৩) যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।"
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংসদের কেউ নন। নির্বাচিত কেউ নন। রাষ্ট্রপতি চাইলেই তাকে সরকারে নিয়োগ দিতে পারেন না। ড. ইউনূস শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশের সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তার জন্য। অথচ তার নিজের নিয়োগই পুরোপুরিভাবে সংবিধান বহির্ভূত। এবং এটি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। এখন সন্ত্রাস এবং বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে তিনি এভাবে কিছুদিন রাজত্ব করতে পারবেন হয়তো। তবে একসময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবেই। তখন আওয়ামী লীগ আসুক, বিএনপি আসুক বা অন্য কোনো দল, ড. ইউনূস ও তার সহযোগীদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে, কোনো সন্দেহ নেই।