Wednesday, September 4, 2024

যাদের ঘুম ভাঙেনি


মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলো ভাঙার সময়ও যাদের ঘুম ভাঙেনি তারা কিন্তু জেগে ঘুমিয়েছিল। এখন জাতীয় সংগীত বদলের হুমকিতে তাদের কুমিরের কান্না দেখতে পাচ্ছি। রবীন্দ্র বিরোধীতা পাকিস্তান আমলে কবি সাহিত্যিকরাই করেছিলেন। গোলাম আযম বা কোন মাদ্রাসার হুজুর সেটার দাবী করেন নাই। পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করতে ৪০ জন কবি সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাদের তালিকা:


১. মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, ২. বিচারপতি আবদুল মওদুদ,৩. আবুল মনসুর আহমদ,৪. আবুল কালাম শামসুদ্দিন, ৫.অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ, ৬. মজিবর রহমান খাঁ, ৭. মোহাম্মদ মোদাব্বের, ৮. কবি আহসান হাবীব ১৩. বেনজীর আহমদ, ১৪. কবি মইনুদ্দিন, ১৫. অধ্যক্ষ শেখ শরফুদ্দিন, ১৬. আ.কা.ম. আদমউদ্দিন, ১৭.তালিম হোসেন, ১৮. শাহেদ আলী, ১৯. আ.ন.ম. বজলুর রশীদ, ২০. মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ, ২১. সানাউল্লাহ নূরী, ২২. কবি আবদুস সাত্তার, ২৩. কাজী আবুল কাশেম (শিল্পী), ২৪. মুফাখখারুল ইসলাম, ২৫. শামসুল হক, ২৬. ওসমান গণি, ২৭. মফিজ উদ্দিন আহমদ, ২৮. আনিসুল হক চৌধুরী, ২৯. মোস্তফা কামাল, ৩০. অধ্যাপক মোহাম্মদ মতিউর রহমান, ৩১. জহুরুল হক, ৩২. ফারুক আহমদ, ৩৩. শরফুদ্দীন আহমদ, ৩৪. বেগম হোসনে আরা, ৩৫. মাফরুহা চৌধুরী, ৩৬. মোহাম্মদ নাসির আলী, ৩৭. এম. নূরুল ইসলাম, ৩৮. কবি জাহানারা আরজু, ৩৯. কাজী আবদুল ওয়াদুদ, ৪০. আখতার উল-আলম।

এদের একেকজন পন্ডিত ব্যক্তি। কেউ হুজুর ছিলেন না। এদের প্রায় ৯৯ জনই মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। এই কবি লেখকরা কে কোথায় কি লিখেছিলেন তার সবটা নিয়ে আগে বিস্তারিত লিখেছিলাম। সেসব আজ আর টানতে চাই না। শুধু আলী আহসানের বক্তব্য কোট করে দেখাই এদেশের বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কি বলতেন-

“আমাদের সাংস্কুতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার এবং হয়তো বা জাতীয় সংহতির জন্য যদি প্রয়োজন হয়, আমরা রবীন্দ্রনাথকেও অস্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছি। সাহিত্যের চাইতে রাষ্ট্রীয় সংহতির প্রয়োজন আমাদের বেশি।? পূর্ব বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে আমাদের উত্তরাধিকার হলো ইসলামের প্রবহমান ঐতিহ্য, অগণিত অমার্জিত পুঁথি সাহিত্য, অজস্র গ্রাম্যগাথা, বাউল ও অসংস্কৃত অঙ্গের পল্লীগান”

স্বাধীনতার পর সৈয়দ আলী আহসানের দায়িত্ব বুঝে নেন আহমদ ছফা। তার ভাষাও একই। তিনি ও তার গুরু প্রফেসর রাজ্জাক সাহেব রবীন্দ্রনাথ লঘু করতে চেয়েছেন সব সময়। বাঙালি মুসলমানের স্বাতন্ত্র্যতা বলে এক ধরণের সাহিত্য ভাষা আমদানির চেষ্টা করেছিলেন। ছফার শিষ্য সলিমুল্লাহ খান পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথকে ‘উত্খাত’ করতে নানা জায়গায় ভাষণ দিয়ে বেরিয়েছেন। তো, এগুলো বিগত ৫৩ বছর ধরে চলেছে। আজকে গোলাম আযমের পুত্রের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের যে আহ্বান সেটা তো সে জনসমর্থন জেনেই বলতে সাহস করেছে। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধের বিবৃতিদাতা ৪০ জনকে পরবর্তীতে “৪০ চোর” বলে ডাকা হতো। এখন ঢাকায়  এরকম বিবৃতি দিতে প্রস্তুত বুদ্ধিজীবী কবি লেখকদের সংখ্যাটা হবে “সাড়ে চার হাজার চোর”!

যারা ২০২৪ অভ্যুত্থান মতান্তরে সামরিক ক্যুকে এখনো মহান বিপ্লব জেনে মধুর হানিমুন যাপন করছে এরা “৪০ চোরের” উত্তরাধিকারী। এরা বাংলাদেশের নাম পাল্টে “বাংলাস্তান” রাখলেও ফেইসবুকে এসে দুই লাইনের কুমিরের কান্না পোস্ট করে হাসনাত-নাহিদদের বিপ্লবী সূর্য সন্তান বলে সহমদ ভাই হয়ে থাকবে। গোলাম আযম পুত্র আসলে আমাদের শত্রু নয়, এরাই আমাদের প্রধান শত্রু!

এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সমন্বয়কদের অনেকেই ছাত্রলীগ করতো। তারপর কওমি জননী মাদ্রাসা সার্টিফিকেটকে বিশ্ববিদ্যালয় সমমনা করে দিলো। বিশ্ববিদ্যালয় ভরে গেলো খালিদ বিন ওয়ালিদের আদর্শের পোলাপান। অন্য দিকে ছাত্রলীগ যুবলীগে শিবির ঢুকালো কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগের হানিফ। ফলে শহীদ রুমীর জায়গায় খালিদ বিন ওয়ালিদ হলো আদর্শ। আর ১৫ বছরে ওয়াজের একের পর এক তারকা জন্ম নিলো সরকারের লাগামহীন পৃষ্ঠপোষকতায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল হেফাজতের সঙ্গে লিঁয়াজোর দায়িত্বে। হাসান মাহমুদ ছিল হাটহাজারীর সঙ্গে সম্পর্কে দায়িত্বে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল নিরব বিপ্লব খালিদ বিন ওয়ালিদ হওয়ার। ফলে সমন্বয়করা মতাদর্শ বদল করলো কয়েকবছরের মধ্যে। ফলাফল হিযবুত তাহরীরর অভ্যুত্থান।

এই দেশে এখনো যে জাতীয় সংগীতটা আছে সেটাই তো ইউনুস সাহেবের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা!

©️সুষুপ্ত পাঠক

No comments: