ঘটনা এক:
টিএন্ডটিতে চাকুরী করেন ফজল সাহেব। ছোট্ট একটি পোস্ট। মাসে বেতন সর্বসাকুল্যে ৫ হাজারের মতো। যখন চাকুরীতে ঢুকেছিলেন তখন কত টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল তা এখন আর নাই তুলি। দেশে বাবা-মা, ভাই বোন মিলিয়ে গোটা বিশ জনের পরিবার। ঢাকায় বউ বাচ্চা। তাদেরও তো বাঁচবার শখ আছে, আছে চাহিদা। ছোট খাট ফোনের লাইনের ব্যাপারে সাহায্য করে কিছু উপরি উপার্জন করতেন। অন্যায়, খুবই অন্যায়।
সরকারের পরিবর্তন হলো। দেশে লাগলো উন্নয়নের জোয়ার। বিশ বছর ধরে যে সিস্টেম নষ্ট হয়েছে একদিনে সেটা ভালো করার জোরাজুরি। ফজল সাহেবের আয় আবার সেই ৫ হাজার। ফলাফল মেট্রিক পরীক্ষার আগে ছেলের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ। বাজার বন্ধ হয় হয়।
তবু আমরা খুশী দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।
ঘটনা দুই:
দরিদ্র বাবার এক সন্তান বাবু। বাবা অনেক কষ্ট করে মেট্রিক পাশ করিয়েছে। ইন্টারমিডিয়েট কোন রকম ঠেলে ঠুলে একবার চেষ্টা করেছিল। ফেল করার পর আর কিছু হয়নি। এযুগে ইন্টারমিডিয়েট ফেল ছেলের কিছু হবার আশা নেই। তবু মামার কল্যানে একটি সরকারী অফিসে নামকা ওয়াস্তে পদে নিয়োজিত ছিল। পরিবারে খাওয়া পরা চলে যেত। খারাপ, খুবই খারাপ।
উন্নয়নের বেচারার চাকরী চলে গেল। হবে, সব কিছু টাইট হবে। বিশ বছরের টাইট একবারে হবে।
তবু আমরা খুশী দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।
ঘটনা তিন:
সরকারী কর্মকর্তা বজলু সাহেব দেদারসে ঘুষ খেতেন। বাড়ি, গাড়ি কি নেই করেন নি। তবু তার ছায়ায় ছিল প্রায় জনা ত্রিশেক কর্মচারী, তিন জন ড্রাইভার। ধান ছড়িয়ে থাকলে অনেকেই খেয়ে যায়। খারাপ খুব খারাপ।
উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে গেল। আজ যে রামও নেই সেই অযোধ্যাও নেই। শুধু রয়ে গেছে ত্রিশটি ক্ষুধার্ত পেট।
পাশ করে দেশের বাইরে চলে এসেছি। কোরাপ্টেড সিস্টেমে কোরাপ্টেড হবার আগেই। এ ব্যাপারে ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে। উন্নয়নের জোয়ার দেখে আমি খুশী। মরুক শালার দুর্নীতিবাজ হাভাতেরা। তবু গরম পানির ছিটা আমার গায়েও পড়ে। কেবলই সরে যেতে চাই, পারিনা। আপনি পারেন কি?
(একই সাথে সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত)
No comments:
Post a Comment