যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীদের বিচার হয়নি বলে তারা যে বিচারের উর্ধ্বে নয় তা প্রমাণের এতোটা উপযুক্ত সময় আগে কখনও আসেনি। গতকাল রাজাকার মুজাহিদ যে বক্তব্য রেখেছেন তার পেছনে যে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা আছে তা আংগুল দিয়ে দেখাবার কোন প্রয়োজন নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৬ বছর পর রাজাকার-আলবদর যুদ্ধাপরাধী তাদের ছানাপোনাদের আচরণ এখন নেক বেশী উদ্ধত। এতে হতাশ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। অন্তত: মুজাহিদ যে খোলা চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিলেন তার দাঁত ভাংগা জবাব দেয়ার সময় এসেছে।
তিরিশ লাখ লোক প্রাণ দিল আর তার বিনিময়ে রাজাকার-জামাতীরা ইসলামের পসরা সেজে জাতীয়তাবাদীদের ঘাড়ে শাখামৃগের মতো আরোহন করে দেশরক্ষার মায়াকান্না দিয়ে যাচ্ছে। কখনও একবারও শুনবেন না এদের মুখ থেকে যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এরা। জামাতীরা যখন এদেশের মা-বোনকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পায়ে ইয়ানত হিসেবে তুলে দিয়ে দেশসেবা করেছিল। নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল নিরপরাধ মানুষদের। কোন অনুশোচনা নেই এই পশুপোষ্যদের মুখে। কি ভয়াবহ নির্বিকার অনুভূতি। কি নির্লজ্জতা।
জিয়ার সামরিক সরকার বৈধতার সন্ধানে ইসলামী জাতীয়তাবাদী থিওরী প্রবর্তন করার সুবাদে সকল নিমকহারাম যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা হয়ে গেল দেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী । পূনর্বাসিত হলো তারা। তারা কোন জনমে কোন অপরাধ করেছিল না কি? ইতিহাস বিকৃতির উৎসব চলছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রান্তিকীকরণ চলছে। হালকা করে দিতে চায় মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী ইতিহাস। তাই, এসব রাজাকারদের ব্যাধির নিরাময় করার দরকার। দরকার আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের। সকল নিমকহারাম রাজাকার ও তাদের পোষ্যদের নিপাত না হওয়া পর্যন্ত চলুক আরেকটি যুদ্ধ। শুরু হোক তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের আসল চেহারা তুলে ধরার। বিচারের এই দাবীকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে আজকের সচেতন প্রজন্ম যে অনেক বেশী প্রস্তুত তা আমাদের সবার মনে জন্ম দিচ্ছে নতুন প্রত্যয় ও প্রত্যাশা।
বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি-জামাত মোর্চার এক্সটেনশন তার প্রমান চোখের সামনেই আছে। ফখরুদ্দীন আহমেদ নিজে স্বাধীনতার পরও বহু বছর পাকিস্তানী সরকারের চাকরি করেছেন। মঈন আহমদে নিজে সেখানকার গ্র্যাজুয়েট। তাদের বায়োডাটাতে তা জলজল করে জ্বলছে। মঈনুল হোসেন তো নিজে জামাতীদের ব্যাপারে অন্ধ। আরেক উপদেস্টা জেনারেল মতিন তাদের সপক্ষে ক'দিন আগে সাফাই গেয়ে গেলেন। সামরিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হর্তাকর্তা ক'দিন আগ পর্যন্ত ছিলেন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে। আর এখন যারা আছেন তাদের সাথেও জামাতীদের দহরম মহরম আছে বলে পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
সরকার যখন দূর্নীতির গান দিয়ে রাজনীতিবিদ শিকার শুরু করলো তাতে কিন্তু জামাতীদের পশমও ধরা হয়নি। চুনোপুটি দু'একজনকে শ্রীঘরে ঢুকালেও আমীররা সযতনে আছেন। চট্রগ্রামের কুখ্যাত জামাত নেতা শাহজাহান চৌধুরী কয়েক মিনিটের জন্য ফস্কে যায়, যখন অন্যদের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনে দুয়ার গোড়ায় যৌথ বাহিনী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পেরেছে। জামাতের সাথে সন্ত্রাসীদের সংযোগ নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য থাকলেও সরকার নির্বিকার। বিষয়টা বেশ স্পস্ট। ১/১১ ঘটল যখন সামরিক বাহিনী দেখল তাদের জাতীয়তাবাদী-জামাতী শিবির মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। জামাতীদের হাত ধরে তাই নতুন জাতীয়তাবাদীরা পূনর্জন্ম লাভ করবে, ক্ষমতার দুধ ভাত খাবে। তাই, দুধ দিয়ে জামাতী সাপদের পোষা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়ো ট্রাজেডী হচ্ছে রাজাকার জামাতীদের পূনর্বাসন। আর ইতিহাস সাক্ষী এটা হয়েছে পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর, তার আগে নয়। ১৯৭৫ আগে মুজাহিদ, কামরুজ্জামান, সাঈদী আর গোলাম আযম কোথায় থাকতেন? সামরিক সরকারগুলো তাদের রাজনৈতিক বৈধতার জন্য বারবার মৌলবাদ জামাতীদেরকে ব্যবহার করেছে। এখনও যদি ব্যবহার করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেনাবাহিনীতে জামাতীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব-প্রতিপত্তি দেশের স্বাধীনতা ও সংহতির জন্য বিশাল হুমকি। তাই, বর্তমান সময়েও জামাতের মুজাহিদরা আশংকায় বাস করে না। তাদের দূর্নীতি কারও চোখে পড়ে না। তাদের দলেও কোন সংস্কারের দরকার হয় না। কারণ, খুবই স্পস্ট। তারা এসব দুনিয়াবী দাবী ও ম্যান্ডেটের উর্ধ্বে বাস করে। তাদের এনজিওগুলোর কোন তদন্ত হয় না। জেএমবি'র সাথে ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনের সম্পর্ক থাকলেও সেই তদন্ত ধামাচাপা পড়ে থাকে। দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মামলাও চাপা পড়ে থাকে। অসংখ্য প্রামাণ্য তথ্য দিয়ে এই লেখার পাতা ভরে দেয়া যাবে। তবে অন্ধজনে আলো দেয়ার চেস্টা বৃথা। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা,দেশপ্রেম, সার্বভৌমত্ব- এসব প্রত্যয়গুলো গোষ্ঠীগত স্বার্থে সংরক্ষিত। জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর মৌলবাদী অপশক্তিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তাদের উদ্ধত আচরণ সহ্য করতে হবে। আর যদি তাদের এই আচরণ অসহ্য মনে হয়, তাহলে আরেকটি যুদ্ধে নামতে হবে যাতে এসব যুদ্ধাপরাধীদেরকে ঝেঁটিয়ে চিরতরের জন্য বাংলার মাটি থেকে বিদায় করা যায়।
No comments:
Post a Comment