Sunday, October 28, 2007

সবকিছু চুরি হয়ে গেছে

সবকিছু চুরি হয়ে গেছে, কেবল স্বত্বাটি ডাকাতি হওয়ার বাকি
প্রকৃতিপ্রেমিক
সূত্র: প্রথম প্রকাশ সচলায়তনে

লেখার কোন ভূমিকা দেবার প্রয়োজন বোধ করছিনা। আজ মন বড়ই বিক্ষিপ্ত। সারা রাত গাছের পাতারা ঘর ছেড়েছে, আর আমি ঘরে বসে অন্তর্জালে ছুটে বেড়িয়েছি আর দেখেছি ১৯৭১ এর ভিডিওগুলি। ঘরে-বাইরে আজ নিস্তরঙ্গ প্রকৃতি, কিন্তু আমার হৃদয় যোগ্যতর হয়েও পরাজয়ের ক্ষোভে উত্তাল। আমার সব প্রাপ্তি, সব গৌরব আজ অসার হওয়ার পথে। মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধ আমার প্রজন্মের কেউই দেখেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের আজ আর দেখা যায় না-- স্বাধীন দেশে আজ পরাজিত হায়েনারা ক্রুর হাসি দেয়-- বলে একাত্তরে কোন যুদ্ধাপরাধী ছিলনা। হায়েনার হাসিতে আমার ঘুম টুটে যায়, আমি অস্বস্তি অনুভব করি। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারি হিসেবে যে মাটির বুকে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে মুক্ত বাতাস দিয়ে বুক ভরাতাম, সে বাতাস আজ বিষাক্ত মনে হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের ফসল আমার মত আর যারা উপভোগ করছি তাদের অনেকের কাছেই মুক্তিযুদ্ধ হয়তো ততটা উচ্চ কোন বিষয় নয়, যতটা আমার বাবা-চাচাদের কাছে। আমাদের অনেকের কাছে মুক্তিযুদ্ধ সেই অর্থে অর্থবহ হয়ে ওঠেনা। কিন্তু একটি বার ভেবে দেখুন, মুক্তিযুদ্ধে একজন মা তার চোখের সামনে হায়েনার বেয়নেটের আঘাতে হারিছিলেন তার শিশু সন্তান-- মনে করুন আপনিই ছিলেন সেই শিশুটি; একজন মতিউরের কথা ভাবুন যিনি দেশের কথা ভেবেই প্রিয়তমাকে ছেড়ে উড়াল দিয়েছিলেন মৃত্যুনীল আকাশে; ভেবে দেখুন বিশ্ববদ্যালয়ের মাঠে সারি করে যে ছাত্রদের গুলি করে মারা হয়েছিল, তাঁদের কেউ হতে পারতেন আপনার বাবা, বড় ভাই, কিংবা আপনজন.. নাহ্ আর ভাবতে পারিনা...

আজ সেই দোসরদের কমান্ডাররা বলে মুক্তিযুদ্ধের সময় নাকি কোন যুদ্ধাপরাধী ছিলনা। আর তাই শুনে আমাদের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক সুশীল সমাজ, দেশপ্রেমিক সব বাহিনী চুপচাপ বসে আছে। শির আজ আমাদের নতশির। আমাদের সবকিছুই আজ চুরি হয়ে গেছে শুধু স্বত্বাটি বাকি। দিনে দিনে এভাবেই ঝরাপাতার মত মলিন হয়ে হারিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থকতা, মুক্তিযুদ্ধের গর্বগাঁথা। হায়েনারা বংশবিস্তার করবে ব্যাকটেরিয়ার মত। তারপর একসময় বলবে ধর ওদের যারা বুকে মুক্তিযুদ্ধ ধারন করে।

1 comment:

Rezwan said...

আমরা ভুলবনা। আমরা ভুলতে দেব না।