সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সামান্য বিষয় নিয়ে বিরোধ দিয়ে গায়ে হাত তোলার ঘটনার পরিণতি গত ২৪ ঘন্টায় অনেকদূর গড়িয়েছে। সামান্য ঘটনার জের ধরে শুরু হলেও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। একটু আগেই খবরে দেখলাম,বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সেনাবাহিনী তাদের ক্যাম্প সরিয়ে নেবে। এটা ছাত্রদের জন্য সাময়িক বিজয়।
ঐতিহাসিকভাবেই সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণ বীতশ্রদ্ধ। এ দেশে রক্ত ঝড়ানোর ইতিহাস শুরু করেছে সেনাবাহিনী। সামরিক আইনের জাঁতাকলে দেশকে নিষ্পেষিত করেছে এই দেশের অর্ধেকেরও বেশী সময়। দেশের আয়ের এক বিশাল অংশ খরচ হয় তাদের পেছনে। তারপরও তারা ছলবলে দখল করে নেয় সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত ও কর্পোরেট ব্যবসাগুলোর নির্বাহী পদগুলো। তারপরও তাদের ক্ষিধে মেটে না। একটা গরীব দেশ অস্ত্র ও উর্দির জন্য কতো খরচ করবে আর নিরন্ন মানুষের জন্য কতো খরচ করবে তার হিসেব কোনদিনও মিলবে না। কারণ, ক্ষমতার উৎস তো জনগণ নয়, বরং অস্ত্র ও বুটের দাপট। তাই, সামরিক বাহিনীর পেছনে খরচের হিসেব সবসময়ই ঝাপসা থাকে।
জাতিসংঘ বাহিনীর মুলা ধরানো না থাকলে এবারও সামরিক বাহিনী প্রকাশ্যেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতো। তাই, এখন করতে হচ্ছে পর্দার আড়াল থেকে। মানুষের মাঝে সামরিক বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস বাড়ছে। তার কারণ বেশ স্পস্ট। এর পাশাপাশি সরকারের উপর চাপ বাড়ছে নির্বাচনের জন্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করেছে। মার্কিন মুল্লুকে আইনের নতুন তালিকায় বাংলাদেশে সামরিক সাহায্যের সাথে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়টি যোগ করাতে টান পড়তে যাচ্ছে গাজরের হালুয়ার। ইউনূস, কোরায়শী, মান্নান ভুইঁয়া দিয়ে খুব জুত হচ্ছে না। বন্যার তোড়ে ভেস্তে যাচ্ছে অনেক সাজানো প্ল্যান। বিপন্ন লোকরা পাচ্ছে না সাহায্য। দরিদ্র লোকরা দু মুঠো খাবার চায়। তাদের মাঝে বাড়ছে হতাশা। রাজনীতিবিদদেরকে গালাগালি করা সহজ, কিন্তু নিরন্ন মানুষের মুখে দু মুঠো খাবার ও এক গ্লাস পানি দেয়ার মতো অরাজনৈতিক কাজটি অনেক কঠিন। তার মাঝে, রাস্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির উপর বিধি নিষেধ তুলতেও গড়িমসি চলছে। মনে হচ্ছে, প্রিয় দেশ কি আরও বড়ো সংকটের দিকে এগোচ্ছে?
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রাত আটটার মধ্যে সেনা ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়ে সেনাবাহিনী পিছু হটছে। ছাত্রদের বিজয়। উর্দিপড়া লোকজনদের প্রতি জনগণ যে দ্রুত বীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত হয়ে উঠছে তা আবারও দৃশ্যমান। বন্দুকের নল দিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো যায়, মন জয় করা যায় না। ভয় দিয়ে নীরব করা যায়, ভালবাসা পাওয়া যায় না। আর একবার ভয় ভেংগে গেলে সেই ভয় দিয়ে আর শাসন করা যায় না। সামরিক বাহিনী রাজনীতির কিং মেকিং ব্যবসা বাদ দিয়ে দেশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করুক। আর এই বিক্ষোভ আর অসন্তোষকে পুঁজি করে অবনতিশীল অবস্থা তৈরীর ছুতো খুব একটা কাজে দিবে না।
তাই, ফিরে গিয়ে পড়ে দেখুন জাতিকে দেয়া নিজেদের দেয়া ম্যান্ডেটগুলো। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেওয়া হোক। রাজনীতির উপর বিধিনিষেধ তোলা হোক। আশু নির্বাচন হোক। সামরিক বাহিনী ব্যারাকে ফিরুক। না হলে বিশে আগস্টের আগুন প্রবলতর হতে থাকবে। তখন সাগরে ঝাঁপিয়ে পরেও কাজ হবে না। এই প্রমাণিত সত্য সামরিক বাহিনী যতো তাড়াতাড়ি উপলদ্ধি করবে ততো তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের ও দেশের মংগল করবে।
No comments:
Post a Comment