Tuesday, August 28, 2007

দোষ কারো নয় গো মা

বিষয়টা গোড়া থেকে বুঝতে চেষ্টা করি। রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার পদে থেকে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দিয়ে গায়ের জোরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, সমর্থনে ছিল সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামাতের নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট। ২০০১-২০০৬ এ জোট সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যায় দলীয় রাজনীতিতে। বিএনপি-জামাত শেষ সময়ে এসে মিত্রহীন হয়ে পড়ে হার্ডলাইনকে আঁকড়ে ধরে। বিরোধীদলগুলোর আন্দোলনেও জঙ্গী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে ১১ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন, ফখরুদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন । দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

সংবিধান অনুসারে জরুরি অবস্থার বৈধতা সর্বোচ্চ ৯০ দিন। সেই মেয়াদ ফুরিয়েছে এই বছরের ১১ মে। কিন্তু জরুরি অবস্থা বলবৎ রয়েছে আবার সংবিধান স্খগিতের ঘোষনাও দেওয়া হয়নি। সংবিধান যদি বলবৎ থেকে থাকে তাহলে কিসের ভিত্তিতে বর্তমান সরকার বৈধতা পাচ্ছেন? বলা হচ্ছে এই সরকার “সামরিক বাহিনি সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার”। সামরিক বাহিনি তো রাষ্ট্রের কর্মচারী। জনগণের করের টাকায় তাদেরকে পোষা হয় বহি:শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। তাদের কাজ গণপ্রতিনিধিদের নির্দেশ পালন করা। ২০০৭ সালের জানুয়ারী মাসে সৃষ্ট সঙ্কট রাজনৈতিক। সমাধানের পথও রাজনৈতিক। পুরো বিষয়টা দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এবং আইন বিভাগের আওতাভুক্ত। সেখানে সেনাবাহিনির ফাংশান কি? “সেনা সমর্থিত” শব্দটা কি কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে? যেহেতু সংবিধান আজ ২৬ আগস্ট রবিবার ২০০৭, গ্রীনিচ মান সময় বেলা ৩টা ৩১ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষনা করা হয়নি, প্রশ্নটা সংবিধানের ভিত্তিতেই করছি। তত্বাবধায়ক সরকার নিজেকে বৈধতা দেন সংবিধানের ধারা-উপধারার সমর্থনে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য রয়েছে জরুরি অবস্থার বিধান। তার সীমা ৯০ দিন। ৯০ দিন পরে নির্বাচিত সংসদে তার বৈধতা যাচাই করতে হয়। নির্বাচিত সংসদ দূরে থাক জরুরি অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোন স্পষ্ট ঘোষনাও সরকারের তরফ থেকে আসেনি। অন্যদিকে “সেনা সমর্থিত” শব্দটি এখন কথায় কথায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার সংবিধানও বলবৎ রয়েছে, যেহেতু স্থগিতের ঘোষনা আসে নি। অন্যদিকে এমন সব বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করছেন যেগুলো নির্বাচিত সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে। সেগুলো গুরুত্বপুর্ণ কিনা সেই প্রশ্ন এখানে অবান্তর। কারণ সবার আগে জনগনকে জানতে হবে যিনি সর্বব্যধিনাশকবটিকার সন্ধান দিচ্ছেন তিনি কে? তিনি কি বিপ্লবী না প্রতিবিপ্লবী? তার উদ্দেশ্য কি? বিপ্লবী নিজেকে বৈধ করেন বিপ্লবী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। সেখানে স্পষ্ট ঘোষনা থাকে। প্রতিবিপ্লবীকে চেনা যায় “প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক” ডেজিগনেশান এবং সাম্রাজ্যবাদী রোডম্যাপ অনুসরণ দিয়ে। বর্তমান সরকার এই পর্যন্ত যে সকল মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার প্রক্রিয়ায় আছেন তার প্রতিটাই প্রতিবিপ্লবীদের সাথে সাজুজ্যপূর্ণ। দূর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনাকে সলেই স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই গ্রেফতার অভিযান কি আইনের স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে? না কি সরকারী সিদ্ধান্তের চাপে ঘটছে। দুটি ঘটনার পার্থক্য মৌলিক। সরকারী প্রভাবে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিচার এমন কি শাস্তির সিদ্ধান্তও সেই সুনির্দিষ্ট সরকারের “প্রভাব” গত হলে বাতিল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত দূবৃত্তরা পরে রাজনীতিতে আরো শক্তিশালী হয়ে প্রত্যাবর্তন করবেন। যেখানে সরকার তার নিজের বৈধতার ভিত্তি স্পষ্ট করছেন না সেখানে দেশের মৌলিক অবকাঠামোগত সংস্কারের দায় তারা কোত্থেকে পান? তারা যদি নিজেদের বিপ্লবী সরকার বলে দাবী করতে চান তবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুন, কর্মসূচী স্পষ্ট করুন। কোনটাই করছেন না আপনারা। যা করছেন তার সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে আইয়ুব-জিয়া-এরশাদের।

1 comment:

Anonymous said...

অতি চমতকার লেখা। বাংলাদেশে সব দুর্নীতি নিয়ে কথা বললেও সামরিক বাহিনীর দুর্নীতির কথা নিয়ে কেউ কিছু বলে না। তারা ধোয়া তুলসী পাতা। চিরকালই এই শেয়ালের দল এই দেশের হৃদপিন্ডকে গ্রাস করে যাচ্ছে।